প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার ধার দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
ঠিক যখন বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভুগছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, তখন বাংলাদেশ কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত বাড়ানোর ক্ষেত্রে একের পর এক রেকর্ড গড়েই চলছে। গৃহযুদ্ধের ক্ষত, শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাতে মহামারি করোনার প্রভাব, উন্নয়ন প্রকল্পে অতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণসহ আরোও বেশ কিছু কারণে এ মুহূর্তে বেশ অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটির জিডিপি প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নেমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি ডলারের ঘরে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এদিকে মহামারি করোনার সময়েও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়ে ৪ হাজার ৫১০ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে, যা জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান দ্বিতীয়।
এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের সঙ্গে শ্রীলঙ্কান রুপি অদল-বদল বা সোয়াপ করেই তা দেওয়া হবে। লাইবর (লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হার) রেটের সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদের হার ধরে এই অর্থ শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তিন মাসের জন্য দেয়া হবে। আর তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য, লাইবরের (লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ সুদ যোগ করে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করবে। এই ঋণচুক্তিতে শ্রীলঙ্কার সরকার এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টার হবে। পাশাপাশি ২০ কোটি ডলার সমমূল্যের শ্রীলঙ্কান রুপি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লিয়েন হিসেবে জমা থাকবে। ফলে রিজার্ভের পরিমাণে কোনো প্রভাব পড়বে না। এর বিপরীতে দেড় থেকে দুই শতাংশ মুনাফা পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। শ্রীলঙ্কা যদি কোনো কারণে এই অর্থ ফেরত দিতে না পারে তখন দু’দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে এই টাকা সমন্বয় করে নেয়ার সুযোগ আছে। তখন শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশে রফতানিকৃত পণ্যের মূল্য স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করবে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কা। এই চুক্তিটি বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং পয়েন্ট অর্জনে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই সামান্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪৬৩ কোটি টাকার পণ্য বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩২৫ কোটি টাকার পণ্য। তাই শ্রীলঙ্কা থেকে ৫০ কোটি ডলার সোয়াপ বা অদল-বদলের প্রস্তাব দেওয়া হলেও কিন্তু দেশটির সঙ্গে আমদানি-রফতানির পরিমাণ বিবেচনায় আপাতত ২০ কোটি ডলার অদল-বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে যোগ দিতে মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসের বাংলাদেশ সফরের পর মুদ্রা বদলের এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে অতি দুর্বল দেশের পাশে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে মুদ্রা অদল-বদল করা হয়। বাংলাদেশের সাথে মুদ্রার অদলবদলের চুক্তি করার পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যে ভারত, চীন ও দক্ষিন কোরিয়ার সাথেও মুদ্রা অদল-বদল করে আসছে।